আশা করি কেউ উচ্চাশা নিয়ে পড়া শুরু করবেন
না। অনেকেই হয়ত এই বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত। তবে যাদের ধারণা পরিষ্কার নয়
তাদের জন্য কিছুটা উপকারে আসতেও পারে। আজকের সংক্ষিপ্ত টিউটরিয়াল থাকবে
ইলেকট্রিক সার্কিটের একেবারে বেসিক একটি বিষয় নিয়ে। একটি সার্কিটে
কম্পোনেন্টগুলো তিনভাবে সংযুক্ত থাকতে পারে: সিরিজ সংযোগ, সমান্তরাল সংযোগ,
এবং ওয়াই/ডেল্টা সংযোগ। ওয়াই/ডেল্টা সংযোগ খুব কমন না হলেও জেনে রাখা ভাল।
এই সংযোগগুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না থাকলে সামনে যেমন এগোনো যাবে না
তেমনি আবার সার্কিট সমাধান করতে যেয়ে প্রতি মুহূর্তে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা
থেকে যাবে। এই লেখাতে প্রথমে বেসিক কিছু ধারণা দেয়া হবে, তারপর প্রশ্নের
জন্য ফ্লোর উম্মুক্ত করে রাখা হবে।
সিরিজ সংযোগ:
সিরিজ বা সমান্তরাল বা ওয়াই/ডেল্টা সংযোগ এর প্রশ্ন তখনই আসবে যখন একটি
সার্কিটে দুই বা ততোধিক রোধক থাকবে। যদি দুটি বিন্দুর মধ্যে দুই বা ততোধিক
রোধক সংযুক্ত থাকে এবং মাঝখানে অন্য কোন পথ না থাকে তাহলে দুই বিন্দুর
মাঝের রোধকগুলোকে সিরিজে সংযুক্ত রোধক বলা হয়। সিরিজে সংযুক্ত রোধকের
ক্ষেত্রে প্রত্যেক রোধকের মধ্য দিয়ে একই কারেন্ট (I) প্রবাহিত হবে। নীচের
চিত্রটি দেখুন:
লক্ষণীয়
যে, দুটি লাল বিন্দুর মধ্যে n সংখ্যক রোধক যুক্ত আছে এবং বাম পাশের লাল
বিন্দু (a) থেকে ডান পাশের লাল বিন্দু (b) পর্যন্ত একটিমাত্র পথ থাকার
কারণে প্রত্যেক রোধকের মধ্য দিয়ে একই কারেন্ট প্রবাহিত হবে। এই ধরণের
সংযোগকে সিরিজ সংযোগ বলা হয়। সিরিজ সংযোগের ক্ষেত্রে দুই বিন্দুর মধ্যে মোট
রোধ হবে সবগুলো রোধের যোগফলের সমষ্টি। রোধের একক হচ্ছে ওহম (Ω)। ধরা যাক
দুটি বিন্দুর মধ্যে ১০, ১৫, ও ২৫ ওহমের তিনটি রোধক সিরিজে সংযুক্ত আছে।
তাহলে মোট রোধ হবে ৫০ ওহম। অন্যদিকে বিন্দু দুটির মধ্যে বিভব পার্থক্য হবে
প্রত্যেক রোধকের দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্যের যোগফলের সমান (Vab = V1 +
V2 + ... + Vn = IR1 + IR2 + ... + IRn)। এখানে a ও b দ্বারা দুই প্রান্তের
দুই লাল বিন্দুকে নির্দেশ করা হচ্ছে, ফলে Vab হচ্ছে দুই লাল বিন্দুর মধ্যে
বিভব পার্থক্য। অন্যদিকে V1 দ্বারা R1 এর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য, V2
দ্বারা R2 এর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য, এবং Vn দ্বারা Rn এর দুই
প্রান্তের বিভব পার্থক্যকে বুঝানো হচ্ছে, যেখানে ওহমের সূত্র অনুযায়ী V =
IR.
সমান্তরাল সংযোগ:
সমান্তরাল সংযোগের ক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক রোধকের এক প্রান্তগুলো একই
বিন্দুতে এবং অপর প্রান্তগুলো আরেক বিন্দুতে সংযুক্ত থাকে। নীচের চিত্রটি
দেখুন:
স্মরণ
রাখার মতো কিছু পয়েন্ট: ১) প্রত্যেক সমান্তরাল পথকে একেকটি ব্র্যাঞ্চ বলা
হয়; ২) দুটি বিন্দুর মধ্যে যত সংখ্যক ব্র্যাঞ্চই সংযুক্ত থাক না কেন এবং
ব্র্যাঞ্চগুলোর রোধের মান যা-ই হোক না কেন, প্রত্যেক ব্র্যাঞ্চ এর দুই
প্রান্তের বিভব পার্থক্য একই হবে; ২) দুটি বিন্দুর মধ্যে যত সংখ্যক
ব্র্যাঞ্চই সংযুক্ত থাক না কেন, তাদের মধ্যে কোন একটির রোধ যদি শূন্য হয়
(মানে শর্ট সার্কিট) তাহলে তুল্য রোধও শূন্য হবে; ৩) প্রত্যেক ব্র্যাঞ্চ এর
মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত কারেন্ট এর যোগফল (Algebraic sum) হবে তুল্য কারেন্ট।
তুল্য রোধের সূত্র উপরে দেয়া হয়েছে।
ওয়াই-ডেল্টা রূপান্তর:
সিরিজ ও সমান্তরাল সংযোগ ছাড়াও একটি সার্কিটে ওয়াই কিংবা ডেল্টা কিংবা উভয়
সংযোগই থাকতে পারে। ওয়াই কিংবা ডেল্টা সংযোগের ক্ষেত্রে সিরিজ-সমান্তরাল
এর সূত্র ব্যবহার করে সমাধান করা যায় না। এক্ষেত্রে আলাদা সূত্র ব্যবহার
করতে হয়। ধরা যাক একটি সার্কিটে ডেল্টা সংযোগ থাকার কারণে সমাধান করা
যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে ডেল্টা সংযোগকে ওয়াই সংযোগে রূপান্তর করতে হবে, এবং
প্রয়োজনে বিপরীতটাও করতে হবে। কিন্তু ডেল্টা থেকে ওয়াই কিংবা ওয়াই থেকে
ডেল্টাতে রূপান্তর করলে রোধগুলোর মান পরিবর্তন হয়ে যায়। নিচের চিত্রে
ওয়াই-ডেল্টা সার্কিট এবং রোধগুলোর মান নির্ণয়ের সূত্র দেয়া হলো।
স্মরণযোগ্য
কিছু পয়েন্ট: ১) যেখানে সিরিজ ও সমান্তরাল সংযোগের ক্ষেত্রে দুটি বিন্দুর
মধ্যে বিবেচনা করতে হয় সেখানে ওয়াই-ডেল্টা সংযোগের ক্ষেত্রে তিনটি বিন্দুকে
বিবেচনায় নিতে হয় (চিত্রে x, y, ও z); ২) ডেল্টা থেকে ওয়াই কিংবা ওয়াই
থেকে ডেল্টাতে রূপান্তর করলে বিন্দু তিনটির কোন পরিবর্তন হবে না, শুধু
রোধগুলোর মান পরিবর্তন হবে; ৩) ডেল্টা থেকে ওয়াই এর ক্ষেত্রে সূত্রগুলো মনে
রাখার সহজ উপায় হচ্ছে সবগুলো রোধের হরের মান একই হবে এবং তা হবে তিনটি
রোধের যোগফলের সমষ্টি (Ra + Rb + Rc)। লবের মানগুলোর ক্ষেত্রে প্রত্যেক
রোধের পাশের দুটি বাহুর রোধের গুণফল হবে। যেমন R1 এর ক্ষেত্রে পাশের দুটি
বাহুর রোধ হচ্ছে Ra ও Rb. ৪) ওয়াই থেকে ডেল্টাতে রূপান্তরের ক্ষেত্রেও
সূত্রগুলো সহজে মনে রাখা যায়। এক্ষেত্রে সবগুলো রোধের লবের মান একই হবে
(উপরের সূত্র দ্রষ্টব্য)। হর হবে প্রত্যেক রোধের বিপরীত বাহুর রোধ। যেমন Ra
এর বিপরীত বাহু হচ্ছে R2. ফলে Ra এর ক্ষেত্রে R2 দিয়ে ভাগ করতে হবে। এভাবে
অন্যান্য রোধের মানও সহজেই বের করা যায়। তবে সর্বাগ্রে চর্চা! সার্কিটের
ক্ষেত্রে নিয়মিত চর্চা ছাড়া ভুল হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট।
ইচ্ছে
করলে কিছু উদাহরণ দেয়া যেত। কিন্তু সার্কিট ডায়াগ্রাম সহ সেগুলো ব্লগে
উপস্থাপন করা বেশ সময়সাপেক্ষ বিধায় আজকের মতো এখানেই রাখছি। তাছাড়া সার্কিট
ডায়াগ্রাম সহ ব্লগে হাতে-কলমে বুঝানো প্রায় অসম্ভব। বেসিকটা বুঝে নিজেই
চেষ্টা করতে হবে। তবে কারো কোন প্রশ্ন থাকলে মন্তব্যের ঘরে জানানো যেতে
পারে।
ConversionConversion EmoticonEmoticon