আজকের পর্বে থেভেনিন'স ও নর্টন'স থিয়রেম
এবং তাদের প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করা হবে। ইলেকট্রিক সার্কিট বিশ্লেষণের জন্য
থেভেনিন'স থিয়রেম একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় থিয়রেম। পাওয়ার
সিস্টেমের ক্ষেত্রে এই থিয়রেম বিশেষ ভাবে ব্যবহার করা হয়। থেভেনিন'স থিয়রেম
অনুযায়ী একাধিক সোর্স ও রোধকের সমন্বয়ে গঠিত যে কোন দুই-টার্মিনাল বিশিষ্ট
লিনিয়ার সার্কিটকে একটি ভোল্টেজ সোর্স ও একটি সিরিজ রোধক দ্বারা
প্রতিস্থাপন করা যায়। নিচের ডায়াগ্রামটি লক্ষণীয় যেখানে বাম পাশের ব্ল্যাক
বক্সের মধ্যে একাধিক ভোল্টেজ সোর্স, একাধিক কারেন্ট সোর্স, ও একাধিক রোধক
আছে। ব্ল্যাক বক্সের মধ্যে জটিল সার্কিটকে একটি ভোল্টেজ সোর্স ও একটি সিরিজ
রোধক দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, ডান পাশের সার্কিট লক্ষণীয়। ডান পাশের
সরল সার্কিটকে মূল সার্কিটের থেভেনিন-সমতুল্য সার্কিটও বলা হয়।
দুই-টার্মিনাল বিশিষ্ট যে কোন জটিল সার্কিটের থেভেনিন-সমতুল্য সার্কিট (Rth ও Vth) পেতে হলে নিম্নের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে:
ধাপ-১: সবগুলো ভোল্টেজ ও কারেন্ট সোর্সকে নিষ্ক্রিয় করে টার্মিনাল A ও B এর মধ্যে তুল্য রোধ বের করতে হবে। এই তুল্য রোধই হচ্ছে Rth. Rth কে থেভেনিন-সমতুল্য রোধও বলা হয়। এই পদ্ধতি শুধুমাত্র ইনডিপেনডেন্ট সোর্স এর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
ধাপ-২:
মূল সার্কিটে টার্মিনাল A ও B এর মধ্যে কোন রোধক থাকলে সেটিকে খুলে ফেলে
যে কোন পদ্ধতির সাহায্যে A ও B এর মধ্যে ভোল্টেজ নির্ণয় করতে হবে। A ও B এর
মধ্যে ভোল্টেজই হবে Vth, যাকে ওপেন-সার্কিট ভোল্টেজও বলা হয়।
ধাপ-৩: Rth ও Vth এর মান পাওয়ার পর থেভেনিন-সমতুল্য সার্কিট আঁকতে হবে। উপরের ডায়াগ্রামে ডান পাশের সার্কিট দ্রষ্টব্য।
উল্লেখ্য
যে, ধাপ ১ ও ২ একে-অপর থেকে স্বতন্ত্র। ফলে যে কোনটি আগে সম্পন্ন করা যায়।
এবার একটি উদাহরণ দেয়া যাক। নিচের সার্কিটে একটি ভোল্টেজ সোর্স ও চারটি
রোধক আছে। টার্মিনাল A ও B এর মধ্যে থেভেনিন-সমতুল্য সার্কিট বের করতে হবে।
ধাপ-১
অনুযায়ী ভোল্টেজ সোর্সকে নিষ্ক্রিয় করলে নিচের সার্কিট পাওয়া যাবে। এই
সার্কিটে টার্মিনাল A ও B এর মধ্যে তুল্য রোধের মান হবে, RAB = Rth = R1 + [(R2 + R3)||R4] = 1 + [(1 + 1)||2] = 2 kΩ.
ধাপ-২ অনুযায়ী মূল সার্কিটে টার্মিনাল A ও B এর মধ্যে ভোল্টেজ হবে, VAB = Vth = V1 (R2 + R3)/(R2 + R3 + R4) = 15 (1 + 1)/(1 + 1 + 2) = 7.5 V. উল্লেখ্য যে, টার্মিনাল A ও B যেহেতু ওপেন সেহেতু রোধক R1 এর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত কারেন্ট হবে শূন্য; ফলে R1 এর আড়াআড়ি বিভব পার্থক্যও শূন্য হবে।
Rth ও Vth এর
মান পাওয়ার পর নিচের মতো করে থেভেনিন-সমতুল্য সার্কিট আঁকতে হবে। মূল
সার্কিটে টার্মিনাল A ও B এর মধ্যে কোন রোধক খুলে থাকলে সেটিকে এখানে
পুনরায় যুক্ত করতে হবে।
নর্টন'স থিয়রেম:
নর্টন'স থিয়রেম অনুযায়ী একাধিক সোর্স ও রোধকের সমন্বয়ে গঠিত যে কোন
দুই-টার্মিনাল বিশিষ্ট লিনিয়ার সার্কিটকে একটি কারেন্ট সোর্স ও একটি
সমান্তরাল রোধক দ্বারা প্রতিস্থাপন করা যায়। নিচের ডায়াগ্রামে বাম পাশের
ব্ল্যাক বক্সের মধ্যে একটি জটিল সার্কিট ও ডান পাশে সেটির নর্টন-সমতুল্য
সার্কিট দেখানো হয়েছে।
এখানে RNo হচ্ছে নর্টন-সমতুল্য রোধ এবং INo
হচ্ছে নর্টন-সমতুল্য কারেন্ট। নর্টন-সমতুল্য সার্কিট দু-ভাবে পাওয়া যেতে
পারে। ইতোমধ্যে যদি থেভেনিন-সমতুল্য সার্কিট জানা থাকে তাহলে খুব সহজেই
সোর্স রূপান্তরের সাহায্যে নর্টন-সমতুল্য সার্কিট পাওয়া যায়, এবং বিপরীতটাও
সত্য। এজন্য থেভেনিন-সমতুল্য সার্কিট ও নর্টন-সমতুল্য সার্কিটকে একে-অপরের
সমতুল্য বলা হয়। সম্পর্কগুলো নিম্নরূপ,
Rth = RNo
INo = Vth/Rth
Vth = INo RNo
উপরে
বাম পাশের সার্কিটকে নর্টন-সমতুল্য সার্কিট এবং ডান পাশেরটিকে
থেভেনিন-সমতুল্য সার্কিট বলা হয়। স্বতন্ত্র পদ্ধতিতেও নর্টন-সমতুল্য
সার্কিট পাওয়া যায়। যেমন Rth ও RNo বের করার পদ্ধতি একই এবং প্রকৃতপক্ষে Rth = RNo. অন্যদিকে নর্টন-সমতুল্য কারেন্ট INo পেতে হলে টার্মিনাল A ও B কে শর্ট সার্কিট করে যে কোন পদ্ধতির সাহায্যে A ও B এর মধ্যে কারেন্ট বের করতে হবে। এই কারেন্টই হবে INo, যাকে শর্ট-সার্কিট কারেন্টও বলা হয়। RNo ও INo এর মান পাওয়ার পর উপরে বাম পাশের সার্কিটের মতো করে নর্টন-সমতুল্য সার্কিট আঁকতে হবে।
ConversionConversion EmoticonEmoticon